একলা পথের যাত্রী এবং অগোছালো ভাবনা
লিখেছেন লিখেছেন নান্দিনী ০৫ জুলাই, ২০১৬, ১০:৩৭:১৪ সকাল
কতই বা আর বয়স হবে তখন,মাত্র
SSCদিলাম,জানতে পারলাম আমার ঘনিষ্ট ফ্রেন্ড প্রেম করছে!কষ্ট পেলাম এটা শুনে।যখন শুনলাম এই প্রেম অনেক দিনের,আমি আজ জানলাম মাত্র,তখন কষ্টের মাত্রা বাড়লো।ওকে বললাম "এখন তো ঐ মানুষটাই তর সব,আমার এতো দিনের বন্ধুত্ব,ভালোবাসার তোকে হঠাত্ এসে দখল করে নিলো,আমার খুব কষ্ট হচ্ছে"। ও বললো-"কষ্ট পাবার কি হলো?এখন ওকে ভালোবাসবো এটাই তো স্বাভাবিক,তুই আসলে দুঃখ বিলাসী,শুধু শুধু কষ্ট পাস"।
সেদিন আর কিছু বললাম না,চুপ থাকলাম,কষ্টের প্রকাশ হলো দীর্ঘশ্বাস। কিছুদিন আগে জানতে পারলাম,ওর বিয়ে
হয়েছে,প্রেমঘটিতো বিয়ে।অথচ প্রেম বিয়ের
কিছুই জানলাম না।নিজেকে,নিজের বন্ধুত্বকে তখন খুব ছোটো মনে হলো।
***
স্কুলে থাকতে জন্মদিনে ফ্রেন্ডরা উইশ
করতো,ছোটো খাটো গিফ্ট দিতো।খুব ভালো লাগতো।প্রতিটা মানুষের কাছে তার জন্মদিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।এই দিনটা কেউ মনে রাখছে,উইশ করছে তাহলে সে আসলেই আপনাকে তার লাইফে গুরুত্ব দিচ্ছে!
আমাদের পরিবারে এসব সেলিব্রেট করা বা উইশ করার রেওয়াজ কখনোই ছিলো না,মনেই থাকতো না কারো।স্কুল জীবনে ফ্রেন্ডদের কাছ থেকে পাওয়া উইশটা ছিলো তাই বিশাল কিছু।সেই দিনগুলা খুব মিস করি।সেই ফ্রেন্ডদের সাথে এখনো যোগসূত্রতা বহালই আছে,তবে সেই দিনগুলা আর নাই।
কলেজের বান্ধবীরা অনেক বাস্তববাদী!আগের দিন জানলেও তাদের মনে থাকবে না।কারন এটা মনে রাখা তাদের কাছে গুরুত্ব বহন করে না,এর চাইতে ঢের গুরুত্ব পূর্ণ কাজ আছে তাদের মনে রাখার মতো।মানুষের কাছে যা গুরুত্বপূর্ণ,তাই সে মনে রাখে,মনে রাখার চেষ্টা করে।অতি বাস্তববাদী বলেই বাস্তবতার গুরুত্বকে তারা গুরুত্ব দিয়ে চলে।
কলেজ/ইউনিভার্সিটি লাইফের কোনো ফ্রেন্ড যখন বলে ফেলে "স্পেশাল মানুষ ছাড়া কাউকে উইশ করি না" আর পরক্ষণেই আপনার মনে হবে,আপনার বার্থডেতে সে কখনো আপনাকে
উইশ করে নি,তাখন আপনার "স্পেশালিটি" তার কাছে কেমন তা আপনার কাছে পরিষ্কার।কষ্ট হলেও এটাই সত্য।
আচ্ছা স্পেশাল কারা হয়?কোন কোন ক্যাটাগরিতে ফেলে মানুষ কে স্পেশাল আর আনস্পেশাল রাখা হয়?অনেক ভেবে চিন্তেও বের করতে পারি নাই।আমি এক্ষেত্রে পুরাই ব্যর্থ!আমার আশপাশের ঘনিষ্টজনদের সবাইকেই স্পেশাল মনে হয়।তাই অনেক চেষ্টা তদবীর করেও নিজের "স্পেশাল মানুষের লিস্ট"করতে পারলাম না।কারন জীবন চলার পথে প্রায় সবাই ই কম বেশি গুরুত্ব বহন করে।
***
ইউনিভার্সিটির অনেক ফ্রেন্ড।সবার সাথে
মোটামোটি ভালো সম্পর্ক থাকলেও একটা সার্কেলের সাথে ঘনিষ্ট বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।এদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ হয়।ক্লাশ,পড়াশোনা,আড্ডাবাজি,ঘোরাঘুরি ইত্যাদী হয়।শিট,বই,নোট আদান প্রদান হয়,ক্ষেত্র বিশেষে "প্রদান" টাই বেশি হয়।আদান খুব ঘনিষ্ট দু/একজন ছাড়া হয় না।সেই ফ্রেন্ড সার্কেলের কেউ যখন বলে "তুমি তো আমার ফ্রেন্ড না"
তখন মনে প্রশ্ন জাগে,ফ্রেন্ডের সংজ্ঞা
আসলে কি?সহপাঠিদের মধ্য থেকে যাদের প্রতি একটু আলাদাভাবে সহমর্মিতা,সহযোগিতা,ভালোবাসা,শ্রদ্ধাবোধ অনুভব করি,তারা আসলে কে?বন্ধুত্বের খাতিরে যাদের জন্য কষ্ট কষ্টই মনে হয় না,তাদের কাছে আমার অবস্থানটা কোথায়? "স্পেশাল" বা "বন্ধুর" লিস্টে স্থান পেতে হলে কি করতে হয় সেটা জানা নেই,জানার প্রয়োজনবোধও করি না।কারন এইসব লিস্টে স্থান পাবার জন্য লড়ে যাই না,লড়ে যাই মানবতার খাতিরে,বন্ধুত্বের খাতিরে,ভালোবাসার খাতিরে।যাদের কাছে সম্পর্কগুলা "লিস্টেড"; তাদের কাছে আর যাই হোক ভালোবাসা স্বতঃসিদ্ধ হয় না।আর যেখানে ভালোবাসাতেই গলদ,সেখানে লিস্টেড থেকে হবে ই বা কি।
***
"একজন মুমিv অন্য মুমিনের আয়না" অথচ এই আয়নায় যদি কোনো ভুল ভেসে ওঠে তাহলে "এটা আমার পার্সোনাল মেটার" অথবা "তোমার সাথে অনেক পার্সোনাল কথা share করে ফেলছি,আমার ভুল হইছে" ব্লা ব্লা ব্লা বলতে আমরা কুন্ঠাবোধ করি না!
****
আমরা নিজের জন্য যা পছন্দ করবো,অন্যদের জন্যেও তাই পছন্দ করা উচিত।নিজের জন্যই যা ভালো না,অন্যের জন্য তা চাই কেমনে?এটা নিচু মানসিকতা ছাড়া আর কিছুই না।
***
প্রকৃতি Give and Take এ বিশ্বাসি,আপনি যা করবেন তা যতো ছোটোই হোক,তা একদিন না একদিন কোনো না কোনো ভাবে আপনার কাছেই ফিরে আসবে।অন্যদের সম্মান দিলে,গুরুত্ব দিলে অন্তর্যামি আপনাকেও সম্মানিত করবেন।
***
জীবনে চলার পথে এমন কিছু মুহূর্ত
আসে,যখন বন্ধু হিসেবে নিজেকে ব্যর্থ মনে হয়।তখন আসলে কষ্টই লাগে।কিন্তু আসলে ব্যর্থ আমি নই।কারন আমি "মানবতার বন্ধু" কে ভালোবাসি,মানবতার বন্ধু কে অনুসরণ করার চেষ্টা করি।মানবতার বন্ধু কিছু পাওয়ার আশায় কখনোই অন্যের সাহায্য,সহযোগিতায় হস্ত প্রসারিত করতেন না।আমি আমার দিক থেকে বন্ধুত্বের দায়িত্ব ঠিকই পালন করে
যাচ্ছি বরং আমার বন্ধুত্বটা অন্যের কাছে
দায়সারা।প্রয়োজনের খাতিরেই এরা কাছে আসে,ঘনিষ্ট হওয়ার প্রয়োজনবোধ করে।
তারপরও as a human being কষ্ট লাগে,দুঃখ হয়।তখন ইচ্ছে করে বলি "Friendship is nothing but a name"।কিন্তু সেটাও বলতে পারি না।কারন আমি বিশ্বাস করি,একটি বন্ধুত্ব অনেক কিছু,তাই বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক থাকা উচিত।বন্ধুই হতে পারে আলোর পথের সহযাত্রী।একটা মেয়ের জীবনে কখনোই অন্য একটা মেয়ে ভালো বন্ধু হতে পারে না।মেয়েদের জীবনে উত্তম বন্ধু হতে পারে দুজন ব্যক্তি,-
প্রথমত তার বাবা,দ্বিতীয়ত তার স্বামী
***
মাঝে মাঝে নিজেকে অনেক বোকা মনে হয়।যে যতো বড় বোকা,সে ততো বড় দুঃখ বিলাসী।কারন জীবনে একটা পর্যায়ে এসে দুঃখ পাওয়াটা একটা বিলাসীতা হয়ে পরে। দুঃখের মধ্যেই কেমন জানি একটা সুখ সুখ ভাব বিরাজ করে তখন।
***
প্রকৃতির প্রয়োজনেই আমরা একত্র হই
আবার প্রকৃতির প্রয়োজনেই হই আলাদা
মধ্য থেকে কিছু সম্পর্ক গড়ে ওঠে
কিছু সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়
কিছু সম্পর্ক বয়ে চলে নদীর মতো
কিছু সম্পর্ক দেয় পীড়া
শিক্ষা গ্রহণের জন্যই প্রকৃতি আমাদের জীবনে নিয়ে আসে বিচিত্র প্রকৃতির সব মানুষদের।
তাই দিন শেষে যখন মনে হবে বন্ধু বলে কেউই আসলে পাশে নাই,তখন দেখবেন অনেকগুলা স্মৃতি আছে,অনেক অনেক ঘটনা প্রবাহ আছে,যা পরবর্তি জীবনটাকে বয়ে নিতে অগ্নি শিখার মতোই কাজ করবে।
দিনশেষে আসলে আমরা আমরাই,নিঃসঙ্গ।একলা পথের যাত্রী।
---০৫/০৭/১৬
---সকাল ৯:১০
বিষয়: বিবিধ
১২৩৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মানুষ আসলে একলা নয়। যদি সে সত্যই নিজেকে একলা করে না ফেলে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন